জেরুসালেমের আল আকসা মসজিদে প্রার্থনা করছেন একজন মুসলিম নারী। ছবি ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০২৩
সম্প্রতি ইসরায়েলে হামাসের বড় হামলার মধ্য দিয়ে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের ইতিহাস যেমন দীর্ঘ, তেমনই জটিল ধরণের। এর মাঝে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে যা এ সংঘাতের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। এবারের সংঘাতের প্রেক্ষাপটে তেমন আটটি বিষয় তুলে ধরা হলো।
হামাস কারা?
হামাস-এর পূর্ণাঙ্গ নাম ‘হরকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া’ যার অর্থ করলে দাঁড়ায় ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন।
হামাস হচ্ছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে। এ গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছিল যখন প্রথম ইন্তিফাদা বা সংগ্রামের অংশ হিসেবে ১৯৮০'র দশকের শেষের দিকে মুসলিম ব্রাদারহুডের ফিলিস্তিনি শাখা হিসেবে।
তখন হামাসের মূলমন্ত্র ছিল তিনটি - ধর্ম, দাতব্য কর্মকাণ্ড এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই। ধীরে ধীরে ফিলিস্তিনিদের কাছে হামাসের গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকে।
গাজা উপত্যকায় ২০০৬ সালের নির্বাচনে বিরোধী রাজনৈতিক দল ফাতাহকে পরাজিত করে হামাসের প্রার্থীরা। ২০০৭ সালে ইসরায়েলকে হঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে হামাস গোষ্ঠী।
ফিলিস্তিনের রাজনীতিতে তখনও পর্যন্ত প্রাধান্য ছিল প্রয়াত নেতা ইয়াসির আরাফাত ও তার ফাতাহ পার্টির।
হামাস ২০০৬ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়ায় সেই প্রথম ফাতাহ পার্টির প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বী একটি দল নির্বাচনের মাঠে নামে।
এরপর থেকে গাজার ক্ষমতায় তারাই আছে এবং ইসরায়েলের সাথে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ করেছে। ২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েল এবং মিশর একজোট হয়ে গাজা উপত্যকা অবরোধ করে রেখেছে। ইসরায়েল বলে সেটা নিরাপত্তার স্বার্থে করা হয়েছে। তবে তাতে করে হামাসের বারবার হামলা বা রকেট নিক্ষেপ বন্ধ হয়নি।
ইসরায়েলে এবারের হামলার পেছনে ইরানের কথা বারবার উঠে আসছে কারণ হামাসের আর্থিক ও সামরিক সহায়তা আসে মূলত ইরান থেকে। হামাসকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণও দেয় ইরান।
ইসরায়েল, আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো হামাসকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে চিহ্নিত করে। বিশেষত এর সামরিক শাখাকে। আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়াতে এবছরই হামাসের একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়া এবং সৌদি আরব সফর করেছে।
হামাসের হামলার প্রেক্ষিতে গাজায় ক্রমাগত হামলা করে চলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ছবি: ১২ই অক্টোবর ২০২৩
হেজবুল্লাহ কারা?
হামাস হামলা চালানোর পর থেকেই ইসরায়েলে হামলা চালানো শুরু করেছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ। সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে।
হেজবুল্লাহর অর্থ সৃষ্টিকর্তার দল। আশির দশকের শুরুর দিকে হেজবুল্লাহ গঠন করেছিল ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডস। উদ্দেশ্য ছিল লেবাননে ইসলামিক আন্দোলনের প্রসার ও সেখানে হামলা করা ইসরায়েলিদের সাথে লড়াই। মূলত শিয়া মুসলিমদের নিয়ে গঠন হয় হেজবুল্লাহ।
হেজবুল্লাহ ইসরায়েলের সাথে সবচেয়ে বড় আকারের যুদ্ধ করেছে ২০০৬ সালে। ইসরায়েলের সাথে ৩৪ দিনের সেই যুদ্ধে লেবাননের ১১২৫ এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয় যাদের বেশির ভাগ ছিল সাধারণ নাগরিক। বিপরীতে ইসরায়েলে মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের যাদের বেশির ভাগই ছিল সেনা। এর পর থেকে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করে গেছে গোষ্ঠীটি।
২০১২ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সুন্নি বিদ্রোহীদের মোকাবেলায় হেজবুল্লাহকে নিয়োগের পর থেকে তাদের সামরিক সক্ষমতা বেড়েছে বলে জানাচ্ছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইসরায়েলসহ বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশ নিষিদ্ধ করেছে এই গোষ্ঠীকে।